সংলাপে সাড়া নেই
চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে দুই নেত্রীকে সংলাপের অনুরোধ জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের টেলিফোনের দুই সপ্তাহ পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তাঁদের চিঠি পাঠালেন। এর পরও সরকার বা সরকারি দলের পক্ষ থেকে সংলাপের কোনো উদ্যোগ নেই।
এদিকে বিরোধী দল বিএনপি জন কেরির চিঠিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, তারা সংলাপে বসতে রাজি। তবে বিরোধী দলও সংলাপ শুরু করতে আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
জন কেরি দুই নেত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন গত রোববার। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রতিনিধিদল গতকাল আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে সংলাপে বসার অনুরোধ জানিয়েছে। সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, প্রধানমন্ত্রী চিঠি পড়লেও এ বিষয়ে গতকাল পর্যন্ত দলীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।
সরকারি দলের নেতারা গতকালও বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি নিয়ে বিরোধী দলের কোনো প্রস্তাব থাকলে তা জাতীয় সংসদে উত্থাপন করতে পারে। কিন্তু সরকার সংবিধানের বাইরে কোনো প্রস্তাব মানবে না।
‘দ্রুত ইতিবাচক সংলাপে বসার’ অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিতে বলা হয়েছে, সব দলের অংশগ্রহণে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনা গত রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ও বিএনপির গুলশানের কার্যালয়ে চিঠি দুটি পৌঁছে দেন।
জানতে চাইলে মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ক্যালি ম্যাকার্থি গতকাল জন কেরির চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কেরি চিঠিতে দুই নেত্রীকে ইতিবাচক সংলাপে বসতে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে বান কি মুন দুই নেত্রীকে ফোন করার দুই সপ্তাহের মাথায় একই প্রক্রিয়ায় শরিক হলো যুক্তরাষ্ট্র। আর চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রথম দায়িত্বশীল কোনো ব্যক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে তাগিদ দিলেন। এর আগে ২৩ আগস্ট সকালে ও সন্ধ্যায় যথাক্রমে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে ফোন করে সংলাপে বসার তাগিদ দেন বান কি মুন।
কেরির চিঠি: ঢাকা ও ওয়াশিংটনের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই নেত্রীকে পাঠানো চিঠিতে দুই দেশের সম্পর্কের তাৎপর্য ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের গুরুত্বের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রীকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই পৃষ্ঠার চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠির প্রতিপাদ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জন কেরি দ্রুত ইতিবাচক সংলাপে বসার তাগিদ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে সংলাপে বসতে জাতিসংঘের মহাসচিবের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
জানা গেছে, দুই পৃষ্ঠার চিঠির শুরুতে জন কেরি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নিবিড় ও আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে দুই দেশের বাণিজ্য-সম্পর্ক সম্প্রসারণে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও কানেকটিভিটির গুরুত্বের কথাটি জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে জন কেরি চিঠিতে বলেছেন, চলমান রাজনৈতিক বৈরিতা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ব্যাহত হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে দুই পক্ষকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংলাপে বসার অনুরোধ জানিয়েছেন। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তিনি এ মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ফাঁকে দুই দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আলোচনার টেবিলে যোগ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নাগরিক সমাজের কাজ করার যথাযথ ক্ষেত্র দেওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছেন জন কেরি।
আওয়ামী লীগ যা ভাবছে: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন কেরির চিঠি নিয়ে রোববার ড্যান মজীনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রেড ব্লকে (যে অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর দাপ্তরিক কক্ষ) চলে যান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনো সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ ছিল না। পরে পাশের ভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এম জিয়াউদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে চিঠিটি গ্রহণ করেন। জিয়াউদ্দিন ওই দিনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি পৌঁছে দেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের মত হচ্ছে, সরকার সংলাপের বিপক্ষে নয়। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সঙ্গে তাঁরা আলোচনায় প্রস্তুত। সংবিধানসম্মত সমাধানে আওয়ামী লীগের আলোচনায় আগ্রহ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, এ মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বান কি মুনের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা ছিল।
সাড়া দিতে প্রস্তুত বিএনপি: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, সরকারের একগুঁয়েমি আচরণের জন্য আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্বনেতারা উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির চিঠিতে সংকট সমাধানে সংলাপের কথা বলা হয়েছে। বিএনপি এই আহ্বানে সাড়া দিতে প্রস্তুত আছে।
বিভিন্ন পক্ষের উদ্যোগ: জন কেরি এমন এক সময় দুই নেত্রীকে চিঠি দিলেন, যখন পরিস্থিতি মূল্যায়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি তথ্যানুসন্ধানী দল ঢাকা সফর করছে। আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে ইউরোপের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে প্রতিনিধিদলটি রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে।
সংলাপের অনুরোধ নিয়ে বান কি মুনের টেলিফোনের দুই দিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন দুই দলকে সংলাপে বসার আহ্বান জানান। কূটনৈতিক সূত্রগুলোর মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে চীনের এ অবস্থান কিছুটা ব্যতিক্রমী। কারণ, বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে সব সময় নীরব থাকার পথেই হেঁটেছে চীন।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে চীনের পাশাপাশি গত এপ্রিলে ঢাকায় কর্মরত ১০টি মুসলিম দেশের উদ্যোগ কিছুটা কৌতূহল সৃষ্টি করে। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শায়ের মোহাম্মদের নেতৃত্বে সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, মরক্কো, ওমান, মিসর ও লিবিয়ার রাষ্ট্রদূতেরা বিরোধীদলীয় নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে সংলাপের মাধ্যমে সংকট দূর করার তাগিদ দেন। প্রয়োজনে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে সরকারি দলের সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখান তাঁরা। সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া না দেওয়ায় এসব দেশের কূটনীতিকদের আর সরব হতে দেখা যায়নি।
সুত্র: prothom-alo.com
নতুন নতুন গল্প ও জোকস পেতে ভিজিট করতে পারেন আমার সাইটে
ReplyDeletewww.valobasargolpo2.xyz,
বাংলা মজার জোকস,
বাংলা কৌতুক,
হাসির কৌতুক,
bangla jokes,
bangali jokes,
mojar jokes,
bangla funny koutuk,
hasir koutuk,
bangla koutuk,
ভালবাসার গল্প,
valobasar Golpo,
Sad Golpo,
মন করার গল্প,
bangla hasir koutuk doctor jokes