Thursday 12 September 2013

দুই দলের অনড় অবস্থানের মধ্যে সংসদ বসছে আজ


সরকারপক্ষ বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারপদ্ধতি নিয়ে সংসদে আলোচনা হতে পারে। তবে যে পদ্ধতির সরকারই হোক না কেন, সেই সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, আলোচনা সংসদের বাইরে হতে হবে। নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা কেমন হবে, সে নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
দেশের প্রধান দুই দলের এই অনড় অবস্থানের মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা থেকে নবম জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশন বসছে। যথাসময়ে নির্বাচন হলে এটিই হতে পারে এই সংসদের শেষ অধিবেশন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এই অধিবেশন অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত চললে এরপর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অধিবেশন ডাকার সুযোগ খুব বেশি থাকবে না। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে হলে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। সংসদের অধিবেশন কত দিন চলবে, সে বিষয়ে আজ সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে।
রাজনীতিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, রাজনৈতিক সংকটের যেসব বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনার সুযোগ আছে, সেসব বিষয়ে এই অধিবেশনেই আলোচনা করতে হবে। দুই দলের অনড় অবস্থান এবং বিদেশিদের তাগিদ মিলিয়ে সংসদের এই অধিবেশনটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে তাঁরা মনে করেন।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, তারা সংসদে যাবে। তবে কবে থেকে তারা অধিবেশনে যোগ দেবে, সে সিদ্ধান্ত গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত নেওয়া হয়নি।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক সমঝোতার বিষয়ে প্রধান দুই দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা চাইলে আমি বিধি অনুযায়ী আলোচনার ব্যবস্থা করব।’
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এই হিসাবে ২৭ অক্টোবর থেকে আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। কারণ, বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। তবে কোনো কারণে মেয়াদ শেষের আগে সংসদ ভেঙে গেলে, ভেঙে যাওয়ার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বিলোপের পর বিরোধী জোট এই ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তবে সম্প্রতি তারা ‘তত্ত্বাবধায়ক’ ব্যবস্থার ওপর জোর না দিয়ে ‘নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার’ ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টি নিয়ে তারা সংসদের বাইরে সংলাপ করতে চায়। বিএনপির মতে, সংসদ বিতর্কের জায়গা, আলোচনার জায়গা নয়। নির্দলীয় সরকারব্যবস্থা নিয়ে সংসদে আলোচনা হলে ভোটাভুটিতে তারা হেরে যাবে। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা করা অর্থহীন।
এদিকে সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকার কথা আবারও জানিয়ে দিয়েছে। গতকাল পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ব্রিটেন, ভারত, জাপানসহ অনেক দেশেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হন প্রধানমন্ত্রী। এখানেও প্রধানমন্ত্রীই হবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান। বিরোধী দলের কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে গিয়ে দিতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন প্রক্রিয়া, কার্যপ্রণালি এবং নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে সংবিধানের বাইরে কিছু হবে না। কারও দলীয় দাবি পূরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করা হবে না।
নজির হতে যাচ্ছে: বর্তমান সংসদ আর মাত্র সাত কার্যদিবস চললে বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে একটি অনন্য নজির সৃষ্টি হবে। এর আগে সর্বোচ্চ ৪০০ কার্যদিবস বৈঠক বসেছিল পঞ্চম সংসদে। বর্তমান সংসদের এখন পর্যন্ত কার্যদিবসের সংখ্যা ৩৯৪। এখন সাত কার্যদিবস সংসদ বসলে পঞ্চম সংসদের রেকর্ড ভঙ্গ হবে।
সুত্র: prothom-alo.com

No comments:

Post a Comment